হাঁপানি বা অ্যাজমা ফুসফুসের একটি রোগ যা শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে। শীতকালে, যখন বাতাস ঠান্ডা এবং শুষ্ক থাকে, তখন হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁপানির প্রবণতা বেশি থাকে। এটি তাদের গুরুতর শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে যায়।
হাঁপানি একটি সাধারণ রোগ যা শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত সমস্যা যা শ্বাসনালীকে অতিমাত্রায় -প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। পরিবেশের সাধারণ পদার্থের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণে রোগীদের শ্বাসনালীও সরু হয়ে যায়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, বুকের বাঁশির মতো শব্দ হওয়া এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
কারণ : অ্যাজমার কারণ এখনও অজানা। কিছু উপাদান অ্যাজমা রোগের উৎপত্তি, আক্রমণ, স্থায়িত্বকে বেশ প্রভাবিত করে, যাদের বলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উপাদান।
কিছু ক্ষেত্রে আমাদের জিনের কারণে, এবং অন্যগুলি আমাদের পরিবেশের কারণে।
জিনগত : হাঁপানি বেশিরভাগই আপনার জিনের উপর নির্ভর করে। যদি আপনার পরিবারের কারো হাঁপানি থাকে, তবে আপনার এটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পরিবেশগত : কিছু পরিবেশগত কারণে হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। হাঁপানি কখনও কখনও অ্যালার্জি, ওয়ার্ক আউট, সর্দি লাগা, বা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্য লোকেদের আশেপাশে থাকার মতো জিনিসগুলির কারণে হয়।
কিভাবে বুঝবেন আপনার হাঁপানি হয়েছে ?
কারও অ্যাজমা হয়েছে কিনা তা কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। যেমন-
* অ্যাজমা হলে রোগীর শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়।
* বুকে চাপ অনুভূত হয়।
* কাশি থাকে, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হয় ইত্যাদি।
লক্ষণগুলো সব রোগীর ক্ষেত্রে একইভাবে থাকে না। কারও কারও শ্বাস নিতে বেশি কষ্ট হয়, কারও বুকের চাপ বেশি থাকে এবং অনেকের কেবল শুকনো কাশি হয়।
আপনার যদি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি থাকে তবে আপনার অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
যেমন-
* বুকে বাঁশির মতো শব্দ।
* রাতে তীব্র কাশি থাকা।
* ব্যায়ামের পর কাশি বা শ্বাসকষ্ট।
* বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন বা উত্তেজকের সংস্পর্শে কাশি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে।
* রোগীর কখনও ঠাণ্ডা লাগলে এবং তা ভালো হতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগলে।
* অ্যাজমার ওষুধে রোগীর লক্ষণ ভালো হয়ে গেলে ইত্যাদি।
জটিলতা : অ্যাজমা কোনো কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে কি না তা কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। এ সময় উপশমকারী ওষুধের পরিমাণ বেশি লাগে এবং ইনহেলার দ্বারা ৩-৪ ঘণ্টার বেশি শ্বাসকষ্টের উপশম থাকে না। তা ছাড়া রাতে শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙে যাওয়া, স্বাভাবিক কাজকর্মে শ্বাসকষ্ট হওয়া, পিক ফ্লো ধীরে ধীরে কমাও জটিলতার লক্ষণ। তখন বিশেষ সতর্ক হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
অ্যাজমা প্রতিরোধে কী করবেন
* হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তির বেডরুমে ধুলাবালি এড়ানো উচিত, কারণ এটি তাদের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
* ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এর ব্যবস্থা করুন। রাতে ঘুমানোর সময় পর্যাপ্ত উষ্ণতায় থাকুন।
* প্রস্রাব-পায়খানার সময় মুখে কাপড় বা মাস্ক ব্যবহার করুন।
* সকালে ও রাতে চলাফেরার সময় নাকে কাপড় বা মাস্ক ব্যবহার করা।
* দিনে বা রাতে কুয়াশায় চলাফেরার সময় নাক ঢেকে রাখুন (গায়ে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় থাকলেও)।
* ঠাণ্ডা বাতাস, ঠাণ্ডা পানি ও ঠাণ্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন।
* স্যাঁতসেঁতে বা ঘিঞ্জি পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পরিবেশ নয়।
* পুরনো জামাকাপড় ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।
* ডাস্ট মাইট কমানোর জন্য ব্যবহৃত বালিশ, তোশক, ম্যাট্রেস ইত্যাদির ধুলাবালি নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং রোদে দিন।
* মশার কয়েল বা স্প্রে, চুলার আগুনের ধোঁয়া থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।
* হাত-মুখ নিয়মিত ধৌত করুন। কারোর সঙ্গে করমর্দন করলেও হাত ধুয়ে ফেলুন।
আল্লাহ আপনাকে ও আপনার পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখুক।
শীতের শ্বাসকষ্ট : এক কঠিন যন্ত্রনা

14
Jan